সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

 নজরুলকে বিদ্রোহী বলা সহজ। কিন্তু দ্রোহের আড়ালেও নজরুল যে একজন তীব্র সেন্সিটিভ এবং অভিমানী মানুষ ছিলেন, সেটা সম্ভবত আমরা মিস করে যাই বারবার।

"আপনি ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ" বলে যে মানুষটা নিজেকে স্ট্রং পার্সন হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরলেন, সেই মানুষটাই আবার এক বুক অভিমান নিয়ে লিখলেন,
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে।
ভালোবেসে বেসে ক্লান্ত একজন প্রেমিকের তীব্র অভিমান ছাড়া এমন লাইন কেউ লিখতে পারে? পারে না।
নজরুলকে নিয়ে লেখার অসুবিধা হলো, তাকে নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছুই লেখা যায় না, কারণ নজরুলের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নাই।
কিন্তু নজরুলকে নিয়ে লেখার সুবিধা হলো, তাকে নিয়ে চাইলে অনেক কিছুই বলা যায়, কারণ নজরুলের ব্যাপ্তি আকাশের মতোই বিশাল। ওতে চাঁদ আছে, সূর্য আছে, তারা আছে, মেঘ আছে, ব্ল্যাকহোলও আছে।
নজরুল এমন একজন মানুষ, যার কথা উঠলে মৌলভীরা বিব্রত হয়, কারণ নজরুল শ্যামা সঙ্গীত লিখেছেন, প্রমীলা দেবিকে বিয়ে করেছেন।
নজরুলের কথা উঠলে সেক্যুলাররাও বিব্রত হন, কারণ বাংলা ইসলামি গানের ভিত্তিটাও নজরুলেরই গড়ে দেওয়া। নবিজীকে নিয়ে নজরুলের যেই অসীম আবেগ ছিলো, সেই আবেগের কারণেই মূলত সেক্যুলাররা নজরুলের আলাপ আসলেই অপ্রস্তুত হয়ে যান।
নজরুলের সবচে বড় সংজ্ঞা হলো, তাঁর কোন সংজ্ঞা নাই। পৃথিবীর কোন গবেষকের ক্ষেত্রেই নজরুলের প্রোপার আইডিওলজি বের করা সম্ভব না। নজরুল নিজের সংজ্ঞাকে আকাশের চেয়েও বড় করে ফেলেছিলেন, যে আকাশকে ধরার ক্ষমতা মানুষকে দেওয়া হয় নাই।
নজরুল লিখেছিলেন, আমি ইন্দ্রানী সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য, মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাশরি, আর হাতে রণতূর্য।
আমরা যদি নজরুলের একেবারে জেনুইন সংজ্ঞা চাই, তাহলে এই দুই লাইন আমাদের মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, নজরুল এমন একজন মানুষ ছিলেন, যার এক হাতে ছিলো বাঁশের বাঁশি, আরেক হাতে রণ তূর্য।
নজরুলকে নিয়ে বলতে গেলে সবাইকে বিব্রত হতে হয় এটা যেমন সত্য, তেমনি সবাইকে বারবার চাইলে বা না চাইলেও নজরুলের কাছেই ফিরতে হয়। একবার না, বারবার।
যে হুজুর নজরুলকে সারাজীবন জাহান্নামি ট্যাগ দিয়ে যায়, তাকেও ময়দানে বসে গাইতে হয় তাওহীদেরই মুরশিদ আমার.....মুহাম্মদের নাম। যেই মুসলমান সমাজ নজরুলকে পদে পদে হেনস্থা করেছে, নজরুলের লেখা, "ও মন রমজানের ঐ রোজা শেষে এলো খুশির ঈদ" গানটা ছাড়া তাদের ঈদ হয় না।
যেই সেক্যুলার সকাল বিকাল নজরুলকে সাম্প্রদায়িক বলে গালি দ্যায়, তিনিই আবার যখন অসাম্প্রদায়িকতার আলাপ টানতে যান, তখন নজরুলের স্মরণ নিতেই হয়। নজরুলের কথা ধার করে বলতে হয়,
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।
প্রেমিকদের নজরুলের কাছে ফিরতে হয় বারবার। প্রেয়সীকে নজরুলের ভাষা ধার করে বলতে হয়, মোর প্রিয় হবে এসো রাণী, খোঁপায় দেব তারার ফুল.....।
বিরহীদেরকেও নজরুলের কাছে ফিরতে হয়। গভীর রাতে হারিয়ে ফেলা ভালোবাসার কথা মনে পড়লে নজরুলের ভাষাতে বলতে হয়, আধো রাতে যদি যদি ঘুম ভেঙে যায়, মনে পড়ে মোরে প্রিয়, চাঁদ হয়ে রবো আকাশের গায়, বাতায়ন খুলে দিও......।
বিপ্লবীদের নজরুলের কাছে ফিরতে হয়। বিদ্রোহীদেরও ফিরতে হয়। প্রেমিকদের ফিরতে হয়। অপ্রেমিকদেরও ফিরতে হয়। এক হাতে সুর, আর আরেক হাতে তরবারি নিয়ে আসা নজরুল তাই কারো একার সম্পত্তি থাকেন না। হয়ে উঠেন সবার।
নজরুল লিখেছিলেন, আমি কবি হতে আসিনি, প্রেমিক হতে এসেছিলাম।
কিন্তু আমার তো মনে হয়, নজরুল কবিও হতে পারেননি, প্রেমিকও হতে পারেননি। নজরুল হয়েছিলেন আকাশ। যে আকাশে জ্বলজ্বলে সূর্য ছিলো, স্নিগ্ধ আকাশ ছিলো, তুমুল ঝড় ছিলো, গুমোট অভিমানের মেঘ ছিলো, প্রেমের জোছনা ছিলো।
নজরুল আকাশ ছিলেন, যে আকাশকে অপছন্দ করা যায়, কিন্তু দিন শেষে যে আকাশের কাছে সবাইকে ফিরতে হয়। রোদ বা বৃষ্টির জন্য, মেঘ বা জোছনার জন্য। যে আকাশকে অপছন্দ করা যায়, কিন্তু অস্বীকার করা যায় না কোনোভাবেই।
©️ সাদিকুর রহমান খান

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

♥নগর বাউল জেমস্ (গুরু)-র সকল গানের তালিকা James All Songs List

 ♥নগর বাউল জেমস্ (গুরু)-র সকল গানের তালিকা:   প্রথম অ্যালবাম: স্টেশন রোড  ১. স্টেশন রোড  ২. ঝর্না থেকে নদী  ৩. একদিন ছিল উচ্ছ্বল নদী  ৪. আমায় যেতে দাও  ৫. আগের জনমে  ৬. আর নয় যুদ্ধ  ৭. যদি এমন হতো  ৮. সত্যের সুন্দর  ৯. দুঃখ কেন করো   দ্বিতীয় অ্যালবাম: অনন্যা  ১.রিকশাওয়ালা  ২. ফেরারি  ৩. দুরন্ত মেয়ে  ৪. অনন্যা  ৫. রংবাজ  ৬. রাজনীতি  ৭. পলাতক  ৮. রাতের ট্রেন  ৯. হৃদয়ের দাবিতে  ১০. টেলিফোন  ১১. তুমি জান   তৃতীয় অ্যালবাম: জেল থেকে বলছি  ১. জেল থেকে বলছি  ২. নীল আকাশ  ৩. ইচ্ছের পালক  ৪. ভাবনা  ৫. জোসি প্রেম  ৬. আমার ভালবাসা  ৭. হৃদয়ের একলা প্রান্তরে  ৮. পেশাদার খুনি  ৯. ঝড়ের রাতে  ১০. ঢাকার প্রেম  ১১. তোমাকে খুঁজি  ১২. প্রাণের শহর   চতুর্থ অ্যালবাম: পালাবে কোথায়  ১. পালাবে কোথায়  ২. প্রিয় আকাশি  ৩. নাযায়েজ  ৪. পূর্ণিমা নৃত্য  ৫. হেরেমের বন্দিনী  ৬....
  জিনিসপত্রের দাম কেনো বাড়ছে জানতে চান? আসুন একটু জেনে নেয়া যাক....মুদ্রাস্ফীতির সাথে খেলাপী ঋণ ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। প্রথেমেই বুঝতে হবে মুদ্রাস্ফীতি জিনিস টা আসলে কি? খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি। মুদ্রাস্ফীতিঃ কোন দেশে সর্বোপরি যতটুকু সম্পদ আছে তার মূল্য ওই দেশের বর্তমানের মোট মুদ্রামাণের(টাকা) সমান। মনে করুন, বাংলাদেশে সর্বমোট ১৫ টাকা আছে এবং এই দেশের সম্পদ বলতে সাকুল্যে আছে ৫ টি কমলা। আর কিছুই নেই। যেহেতু দেশের মোট সম্পদের মূল্য মোট মুদ্রামানের সমান, সেহেতু এই ৫ টি কমলার মূল্য ১৫ টাকা। অর্থাৎ, প্রতিটি কমলার মূল্য ৩ টাকা। এখন যদি আরো ৫ টাকা ছাপানো হয়, তাহলে মোট মুদ্রামান হয়ে যাবে ১৫+৫ = ২০ টাকা। কমলা কিন্তু বাড়েনি। তারমানে এখন[নতুন করে ৫ টাকা ছাপানোর পর] ৫ টি কমলার মোট মূল্য হয়ে গেল ২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কমলার বর্তমান মূল্য ৪ টাকা। এই যে সম্পদ না বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর ফলে কমলার দাম ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা হয়ে গেল, এইটাই সহজ ভাষায় "মুদ্রাস্ফীতি"। একই পণ্য আগের থেকে বেশি দামে ক্রয় করা মানেই মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। অর্থাৎ, আমরা বলতে পারি "কোন দেশের সম্পদের পরিমাণ ...

বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত.pdf

বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত.pdf To download this pdf simply follow instructions if not then use vpn to open MediaFire. Some isp just blocked this website mistakenly. Author: Jsny