শোনো বৌমা,আমার ছেলে কিন্তু তেল ঝাল মশলা বেশি খেতে পারেনা,সেই বুঝে আজ থেকে রান্নার দায়িত্ব তোমার...!!
সকাল আটটায় ছেলে বেরোয়,আমি এতদিন ওর টিফিন ঠিক সময়ে করে ওকে খাইয়ে অফিস পাঠিয়েছি,আজ থেকে সংসার তোমার,সব তোমার মত করে টাইম মেনে কোরো,ছেলে কে না খেয়ে যেনো অফিস না যেতে হয়...!!
আর শুনে রাখো,আমার ছেলে ওই বড়োই হয়েছে,ওর ছেলেমানুষী যায়নি,জল টাও মা কে এগিয়ে দিতে হবে তবে খাবে, তাই আজ থেকে আমার ছুটি,ওর সময় মত সব কিছু এগিয়ে দেওয়া,অফিস যাবার সময় গেঞ্জি,জাঙ্গিয়া,ওয়ালেট,বেল্ট,রুমাল সব এক জায়গায় করে রাখবে,নইলে ই রণমূর্তি,মনে থাকে যেন...
বিয়ের আট দিনের মাথায় অলিভিয়া কে টানা কথা গুলো বলে হাহাহা করে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন নতুন শাশুড়ি মা,যিনি অলিভিয়া কে দেখতে গিয়ে বলেছিলেন,ওনার মেয়ে নেই, তাই উনি খুব খুশি,আজ থেকে ছেলের পাশাপাশি উনি এক মেয়েরও জননী,আজ থেকে উনি অলিভিয়ার দ্বিতীয় মা..!!
সকাল নয়টায় ঘুম থেকে ওঠা আদুরে মেয়েটাও ভেবেছিল,সত্যিই সে আরেকটা মা পাবে, সেও খাবারের ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে, মা ফোরণ ছাড়া রান্না করতো ওর জন্য, সেও কলেজ যাওয়ার সময় তার মা মুখের গোড়ায় ওর মা খাবার এনে দিত,টিফিন করে দিত ঠিক সময়ে,সেও বেরোবার সময়,ওড়না,রিস্টওয়াচ,রুমাল সব ওর মা এক জায়গায় করে রাখত,নইলে ই ঠিক ওর বরের মত রণমূর্তি...!!
তবে আজ হঠাৎ করেই আটটা দিনের ভেতর মেয়েটার সব অভ্যেস তো বদল করতেই হবে তার সাথে সাথে একটা মা এর মত দায়িত্ত্ব ঘাড়ে নিতে হবে তাকে,এবং তাতে যেনো কোনো খুঁত না থাকে,এও তাকে দেখতে হবে....মাথা কাজ করছিল না অলিভিয়ার ,কি করে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না,কাকে বলবে, কার থেকে পরামর্শ নেবে,কি ই বা বলবে.... এসব ভাবতে ভাবতে সেই রাতে মাথা ভরা চিন্তা নিয়ে ঘড়িতে ভোর পাঁচটায় অ্যালার্ম দিয়ে বালিশে মাথা রাখলো অলিভিয়া...!!
পরদিন চোখ খোলা মাত্রই ধড়ফড়িয়ে মোবাইলে চোখ রাখতেই চক্ষু চড়কগাছ,সকাল নটা, বিছানা থেকে এক লাফে নামতেই সামনে দাঁড়িয়ে তার স্বামী অনিরুদ্ধ...!!
- তুমি?? অফিস যাও নি?? নিশ্চই বেরোতে পারোনি আমার জন্য??বিশ্বাস করো,আমি অ্যালার্ম দিয়েছিলাম,কিন্তু কি হলো,আমি শুনতেই পাইনি,কি মরণঘুম ধরলো আমার... ইস......
- থাক,মা র ঘরে চলো একবার,কথা আছে...!!
অলিভিয়ার সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে এলো, নতুন এক পরিবেশে পাশে যেনো কেউ নেই,খুব ইচ্ছে করছিল তার মা এর আঁচল টা শক্ত করে ধরতে,তাতে যেনো একটু জোর পেত সে,কিন্তু মা তার অনেক দূরে,কিছু ভাবার আগেই...
- কি হলো,চলো...!!
শাশুড়ি মা মুখ চুন করে বসে আছেন,অনিরুদ্ধ ঢুকলো,পেছন পেছন অলিভিয়া...!!
সবাই চুপ,কেউ কোনো কথা বলছে না, অলিভিয়া বলে উঠলো,"মা ,আমি অ্যালার্ম দিয়েছিলাম,কিন্তু....
অলিভিয়ার কথা থামিয়ে অনিরুদ্ধ বলে উঠলো...
- অ্যালার্ম আমি অফ করে দিয়েছিলাম....!
হ্যাঁ,আমি..!!
গতকাল তোমাদের কথোপকথন আমার খানিকটা কানে গেছিল,
মা,অলিভিয়া আমার থেকে চার বছরের ছোট, আমি তোমার কাছে সেই ছোট আছি,কিন্তু অলিভিয়া কি করে তাহলে বড়ো হয়ে গেলো বলতে পারো?
আমার ছেলেমানুষী গেলো ন,কিন্তু অলিভিয়া কিকরে হঠাৎ ই ম্যাচিওর হয়ে উঠবে তা বলতে পারো?? ওকে আমার জন্য কিছু করতে হবেনা,এসব করানোর জন্য ওকে আমি বিয়ে করিনি, তার চেয়ে বরং আমরা দুজনেই একটু বড় হয়ে উঠি,নিজের জিনিস গুলো সামলে নিজেরাই নিজেদের গুছোতে শিখি,
তুমি একটা কথা ঠিক বলেছো,আজ থেকে তোমার ছুটি,এতদিন তুমি সব করেছ,তার কোনো মূল্য নেই,শোধ ও করতে পারবনা, তবে আজ থেকে আমি আমারটা নিজেই করার চেষ্টা করবো,দুদিন পাউরুটি পুড়বে,তিনদিনের দিন ঠিক পারবো,অলিভিয়া চাইলে ও নিজে থেকেই আমার জন্য যতটুকু চাইবে করবে,আমিও তাই,ইচ্ছে হতেই পারে কোনোদিন ওকে জুস বানিয়ে খাওয়াবার,সেটা আমার ইচ্ছে তে,তবে কারোর ওপর দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কখনোই উচিৎ না মা,চিরকাল চিরটাদিন তো উচিৎ শিক্ষাই দিয়ে এসেছ মা,তবে আজ কেনো ভুল হবে...
তোমার কাছে বড়ো না হওয়া ছেলেটার স্ত্রীও তার মা এর সেই ছোট্ট মেয়ে,তাকেও বড়ো হবার সময় দাও,আমাকেও সুযোগ দাও....আমরাও এভাবে ধীরে ধীরে দায়িত্ববান হয়ে উঠি,একসাথে,একই ভাবে..!!
অবাক পলকে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলো অলিভিয়া...দু চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু বইতে লাগলো,অবশ্যই আনন্দাশ্রু......!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন